**এলিয়েনের আগমন: অজানা সংকেত**
সুজন ঢালী রাসেল:
২০৮৭ সাল। পৃথিবী তখন একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে, শহরগুলোর বেশিরভাগই পানির নিচে। মানুষ এখন ভাসমান শহরে বাস করে, যেগুলো কৃত্রিম দ্বীপের মতো সাগরের উপর ভেসে থাকে। তবে মানুষের সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল মঙ্গল গ্রহে একটি ছোট উপনিবেশ স্থাপন। সেখানে একটি গবেষণা কেন্দ্রে কাজ করছিলেন ডক্টর আরিয়া রহমান, একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তিনি ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি পৃথিবীর বাইরে একটি অজানা সংকেত শনাক্ত করেন।
.jpg)
এক রাতে, মঙ্গল গ্রহের গবেষণা কেন্দ্রে আরিয়া তাঁর টেলিস্কোপের সামনে বসে ছিলেন। তিনি দূরবর্তী ছায়াপথে একটি অদ্ভুত রেডিও তরঙ্গ ধরতে পারেন। এটি কোনো সাধারণ কসমিক শব্দ ছিল না। তরঙ্গের মধ্যে একটি পুনরাবৃত্তিমূলক প্যাটার্ন ছিল, যেন কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে সংকেত পাঠাচ্ছে। আরিয়া উত্তেজিত হয়ে তাঁর সহকর্মী ক্যাপ্টেন জ্যাক লি-কে ডাকলেন।
"জ্যাক, এটা দেখো! এটা কোনো প্রাকৃতিক সংকেত নয়। এটা... এটা যেন কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইছে!" আরিয়ার গলায় উত্তেজনা আর ভয় মিশে ছিল।
জ্যাক, যিনি একজন অভিজ্ঞ মহাকাশচারী, সংকেতটি পরীক্ষা করে বললেন, "এটা সত্যিই অদ্ভুত। কিন্তু আমরা এখনই পৃথিবীতে খবর পাঠাতে পারি না। প্রথমে এটার উৎস বের করতে হবে।"
দিনের পর দিন আরিয়া ও জ্যাক সংকেতটির উৎস খুঁজতে থাকলেন। অবশেষে, তারা বুঝতে পারলেন যে সংকেতটি আসছে কুইপার বেল্টের একটি অজানা বস্তু থেকে, যা সৌরজগতের প্রান্তে অবস্থিত। এটি কোনো গ্রহাণু বা ধূমকেতু নয়, বরং একটি বিশাল, ধাতব কাঠামো। এটি দেখতে একটি ডিম্বাকৃতির মহাকাশযানের মতো।
---
দুই সপ্তাহ পর, পৃথিবী থেকে একটি দল এলো মঙ্গল গ্রহে। তাদের সঙ্গে ছিলেন ডক্টর সোফিয়া ক্রুজ, একজন বহির্জাগতিক জীববিজ্ঞানী। তিনি বললেন, "যদি এটা সত্যিই এলিয়েনদের মহাকাশযান হয়, তাহলে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমরা জানি না তারা বন্ধুত্বপূর্ণ কি না।"
কিন্তু আরিয়া অন্যরকম ভাবছিলেন। তিনি বললেন, "যদি তারা আমাদের ক্ষতি করতে চাইত, তাহলে এতদিনে তারা কিছু করত। তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায়। আমার মনে হয়, আমাদের তাদের সঙ্গে কথা বলা উচিত।"
তারা সিদ্ধান্ত নিল যে একটি সংকেত পাঠাবে। আরিয়া একটি সরল গাণিতিক ক্রম ব্যবহার করে একটি বার্তা তৈরি করলেন, যা যেকোনো বুদ্ধিমান প্রাণী বুঝতে পারবে। বার্তাটি ছিল: **"আমরা পৃথিবী থেকে। আমরা শান্তিতে এসেছি। আপনারা কে?"**
কয়েক ঘণ্টা পর, অবিশ্বাস্য কিছু ঘটল। মহাকাশযান থেকে একটি উজ্জ্বল আলোর ঝলক এলো, এবং তারপর তাদের স্ক্রিনে একটি চিত্র ফুটে উঠল। এটি ছিল একটি ত্রিমাত্রিক হলোগ্রাম। হলোগ্রামে একটি প্রাণী দাঁড়িয়ে ছিল। তার শরীর ছিল দীর্ঘ, পাতলা, এবং তার চোখ দুটি ছিল উজ্জ্বল নীল। তার মাথায় কোনো চুল ছিল না, এবং তার ত্বক ছিল ধূসর-নীল রঙের।
প্রাণীটি একটি অদ্ভুত কণ্ঠে বলল, "আমরা জেরান। আমরা এসেছি তোমাদের সঙ্গে জ্ঞান ভাগাভাগি করতে। তোমাদের গ্রহ বিপদে আছে। আমরা তোমাদের সাহায্য করতে পারি।"
---
আরিয়া, জ্যাক, এবং সোফিয়া হতবাক হয়ে গেলেন। জেরানরা জানাল যে তারা একটি প্রাচীন সভ্যতা, যারা হাজার হাজার বছর ধরে ছায়াপথে ভ্রমণ করছে। তারা পৃথিবীতে এসেছে কারণ তারা জানে যে মানুষ তাদের গ্রহকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। জেরানদের প্রযুক্তি এত উন্নত ছিল যে তারা পৃথিবীর জলবায়ু পুনরুদ্ধার করতে পারত। কিন্তু তারা একটি শর্ত দিল: মানুষকে তাদের যুদ্ধ আর লোভ ত্যাগ করতে হবে।
আরিয়া বললেন, "আমরা কি এই দায়িত্ব নিতে পারব? আমাদের মানুষকে বোঝাতে হবে যে এটা আমাদের শেষ সুযোগ।"
জ্যাক মাথা নাড়লেন। "এটা সহজ হবে না। কিন্তু আমাদের চেষ্টা করতেই হবে।"
---
তারপর থেকে, আরিয়া এবং তাঁর দল পৃথিবীতে ফিরে গেলেন জেরানদের বার্তা নিয়ে। কিন্তু মানুষ কি তাদের অতীত ভুল থেকে শিক্ষা নেবে, নাকি তারা আবারও লোভ আর ক্ষমতার পেছনে ছুটবে? এটি ছিল এমন একটি প্রশ্ন যার উত্তর কেউ জানত না। তবে আরিয়া বিশ্বাস করতেন, যতক্ষণ আশা আছে, ততক্ষণ মানুষের জন্য একটি নতুন শুরু সম্ভব।
জেরানদের মহাকাশযানটি তখনো সৌরজগতের প্রান্তে অপেক্ষা করছিল। তারা জানত, মানুষের সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ।
চলবে.......
Comments
Post a Comment