ই রা নে র হামলায় জ্বলছে ই স রা ই ল -

 

জ্বলছে ইসরায়েল, কাঁদছে ইহুদিরা! মনে কী পড়ছে ফিলিস্তিনিদের?


চারিদিকে বাজছে সাইরেন, ক্ষেপনাস্ত্র হামলা হবে একটু পর। শুনশান নীরাবতা পালন করছে প্রাপ্ত বয়স্করা, কান্নার রোল শিশুদের। সেই সাথে পাখিরা যেনো কিচিরমিচির শব্দে সাবধান করছে এই শুরু হলো হামলা, পারলে পালিয়ে যাও বেঁেচ থাকো। বিগত দুবছর যাবৎ এটি নিত্যদিনের ঘটনা ফিলিস্তিনিদের কাছে। দখলদার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যেনো এবার হারে হারে টের পাচ্ছে ফিলিস্তিনিদের হৃদয়ের সেই রক্তক্ষরণ। এবার ইসরায়েলের বাসিন্দাদেরও দেখা যাচ্ছে ফিলিস্তিনের সাধারণ নাগরিকদের মতো ক্ষেপনাস্ত্র থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াতে। স্বয়ং নেতানিয়াহু তো ইরানের হামলা থেকে বাঁচতে আগেই হেলিকপ্টারে করে পালিয়েছেন দিনের আলোতেই।


ইসরায়েল এখন রীতিমতো জ¦লছে ইরানের অত্যাধুনিক সব ক্ষেপনাস্ত্রের আঘাতে। সম্প্রতি ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরায়েল নজিরবিহীন হামলা চালায় দেশটিতে। এরপরই মূলত পাল্টা মিসাইল হামলা চালাতে থাকে ইরান। আধুনিক সব মিসাইল হামলায় এখন ঠিক গাজার প্রতিচ্ছবিই দেখা যাচ্ছে ইসরায়েলে। রাজধানী তেলআবিবসহ ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে বাট ইয়াম, পেতাহ টিকভা, রামাত গান, হাইফা সহ বড় শহরগুলো।


ইরানের মুহুর্মুহু এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ৫০ জন নিহত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে। আর আহতের সংখ্যা এক হাজারের বেশি বলেও দাবি করা হচ্ছে। তবে, নির্ভরযোগ্য কিছু সূত্র বলছে নিহতের এই সংখ্যা কোনভাবেই ৫০০ এর কম নয়। আর আহতের সংখ্যাও ছাড়িয়ে গেছে ৪ হজারের বেশি। ইসরায়েল এতদিন গাজার বেসামরিক নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর মুহুর্মুহু হামলা চালিয়েছে কাপুরুষের মত। হত্যা করেছে ৬০ হাজারের বেশি নিরীহ অসহায় নিরস্ত্র মুসলমানদের। প্রকৃতি একটা সময় নাকি সব কিছুই ফিরিয়ে দেয়, ইসরায়েলকেও এখন সেই হিসেব কড়া গন্ডায় বুঝিয়ে দিচ্ছে আরেক মুসলিম দেশ ইরান। তারা শুধু একা নয় ইতিমধ্যে দেশটির পাশে দাঁড়িয়েছে চীন-রাশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ।

নেতানিয়াহু বোধহয় ভুলে গিয়েছিলো ইরান ফিলিস্তিনের মত সেনাবাহিনী হীন বা নিরস্ত্র দেশ নয়। ভিমরুলের চাকে হানা দিয়ে এখন রীতিমতো কাঁদছে কট্টর ইসলাম বিদ্বেষী ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। নেতানিয়াহু এখন যেনো শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টায় মত্ত। গাজায় চালানো ইসরায়েলি আগ্রাসনে মাঝেমধ্যেই গর্জে উঠতে দেখা যেতো স্বয়ং ইসরায়েলিদেরও এরপর কখনো মুসলমানদের গণহত্যা করা থামননি এই নরপিশাচ। শিশু, নারী, বৃদ্ধ কেউই রেহায় পায়নি ইসরায়েলি আগ্রাসন থেকে। মুহুর্মুহু ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালিয়ে গাজাকে ধ্বংস স্তুপে পরিণত করা নেতানিয়াহু এবার বাঁচতে ভিক্ষার থালা হাতে নিয়েছে। যুদ্ধ থামানোর জন্য রীতিমতো এখন কান্নাকাটি করছে নেতানিয়াহু। তার পরম মিত্র আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পায়ে ধরে ভিক্ষা চাইছেন যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। কিন্তু, ইসরায়েলে হামলা অব্যহত রাখা ইরান নেতানিয়াহুকে যেনো উচিৎ শিক্ষা না দিয়ে ছাড়বে না কোনভাবেই। যা মনে কারিয়ে দিচ্ছে জাতিসংঘে বারবার ফিলিস্তিনের মুখপাত্রদের ইসরায়েলের প্রতি যুদ্ধ বন্ধের আর্জি জানানোর কথা।


এদিকে ইরানের এসব ব্যালিস্টিক ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় রাজধানী তেল আবিব, বাট ইয়াম, পেতাহ টিকভা, রামাত গান, হাইফা সহ বড় শহরগুলোতে বহু আবাসন ধ্বংস হয়েছে। আর বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন বাসিন্দারা। রীতিমতো এখন হাসপাতালের নিচে গিয়ে ঠাঁই নিতে হচ্ছে ইসরায়েলিদের। যা মনে করিয়ে দেয় গাজার সেই অসহায় মুসলমানদের হাসপাতালে আশ্রয় নেওয়ার কথা। হাসপাতালে ঠাঁই নিয়েও সেদিন ইসরায়েলের মিসাইলের আঘাত থেকে বাঁচতে পারেনি ফিলিস্তিনিরা।

গাজা উপত্যকাকে ধ্বংশ স্তুপে পরিণত করা ইসরায়েল ইরানের হামলার কবলে পড়ে এবার ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। আগ বাড়িয়ে ইরানে হামলা চালাতে গিয়ে এখন ইরানের ক্ষেপনাস্ত্রের আঘাতে যেনো গাজার প্রতিচ্ছবিই দেখছে ইসরায়েল বাসী। যেই ইসরায়েল এতদিন ধরে গাজায় ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালিয়ে ধ্বংশস্তুপ বানিয়েছে, আজ সেই একই ধরনের ধ্বংসস্তূপ, আতঙ্ক ও মৃত্যু দেখতে পাচ্ছে নিজ ভূখণ্ডে। বিশ্লেষকরা বলছেন ইসরায়েল যেন এখন গাজারই প্রতিচ্ছবি। ২৩ এর অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর লাগাতার হামলায় গাজা উপত্যকায় নিহত হয়েছে হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনি, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। হাসপাতাল, স্কুল, আশ্রয় কেন্দ্র কোনো কিছুই রক্ষা পায়নি তাদের হামলা থেকে। আন্তর্জাতিক মহল বারবার মানবিক যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানালেও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার কড়া অবস্থান বজায় রাখে। সুযোগ পেলেই তাদের পশ্চিমা মিত্রদের সহায়তায় হামলা চালায় নিরীহ মুসলমানদের ওপর।

ইরানের মুহুর্মুহু ক্ষেপনাস্ত্রের আঘাতে এখন দিশেহারা নেতানিয়াহু সরকার। বারবার ইরানের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে যুদ্ধ থামানোর। কিন্তু ইরানও নাছোড়বান্দা, ইসরায়েলকে উচিৎ শিক্ষা না দিয়ে ওরাও থামতে রাজি নয়। এ যেনো প্রকৃতির মধুর প্রতিশোধ। ইসরায়েল গাজায় নিরীহ মুসলমানদের ওপর অমানবিক ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালালে বারবার যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব দেওয়া হয় ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে, হামাস যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেও নেতানিয়াহু যেনো ফিলিস্তিনের অসহায় মুসলমানদের রক্ত নিয়ে উল্লাসে মেতেছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে যুদ্ধ বিরতিতে কোনভাবেই রাজি হয়নি নেতানিয়াহু সরকার।

ইতিহাস সাক্ষী অন্যায়ভাবে কারো ওপর আগ্রাসন চালালে সেই আগুন একদিন নিজের ঘরেও লাগে। নেতানিয়াহু সরকারের উচিত এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎ এ ফিলিস্তিনের অসহায় মুসলমানদের ওপর হামলা চালানো বন্ধ করা, এমনটিই বলছেন বিশ্লেষকরা।

এখন যখন ইসরায়েল জ¦লছে, কাঁদছে নেতানিয়াহু, তখন কেন মায়াকান্না আসছে বিশ্বের প্রভাবশালী কিছু দেশগুলোর? তখন কোথায় ছিলো এসব বিশ্ব নেতারা যখন গাজার মুসলমানদের ওপর গণহত্যা চালানো হচ্ছিলো? এখন কি মনে পড়ে না গাজাবাসীর কথা? এমনটিই বলছেন নেটিজেনরা।
 

Comments