*শিরোনাম: আলোর ছায়া**
সালটা ২৭৫০। পৃথিবী আর আগের মতো নেই। মানুষের অতিরিক্ত সম্পদ লোভ আর যুদ্ধের ফলে বায়ুমণ্ডল প্রায় ধ্বংসের মুখে। আকাশ ধূসর, সমুদ্র শুকিয়ে গেছে, আর গাছপালা কেবল ইতিহাসের বইয়ে। তবে মানুষ বেঁচে আছে—কৃত্রিম গম্বুজের নিচে, যেখানে অক্সিজেন কিনতে হয় টাকা দিয়ে। এমন একটা সময়ে এরিয়েনরা এলো।
তারা এলো না যুদ্ধ করতে, না ধ্বংস করতে। তাদের চেহারা ছিল আলোর মতো—ঝিকঝিকে, স্বচ্ছ, কিন্তু তবু স্পষ্ট। তাদের ভাষা ছিল শব্দহীন, মনের মধ্যে সরাসরি ছবি আর অনুভূতি পাঠানোর ক্ষমতা। তাদের নাম ছিল "লুমারি"। তারা বলল, "আমরা তোমাদের বাঁচাতে এসেছি, কিন্তু শর্ত আছে।"
মানুষের নেতারা প্রথমে ভয় পেল। কিন্তু বিকল্প কী? লুমারিরা একটি প্রযুক্তি দিল—একটি ছোট কালো বাক্স, যাকে তারা বলল "পুনর্জন্ম কোর"। এই বাক্স পৃথিবীর মাটি, জল, আর বাতাসকে আবার ফিরিয়ে আনতে পারে। কিন্তু এর জন্য দরকার ছিল মানুষের সম্মতি—তারা তাদের স্বাধীন ইচ্ছাকে লুমারিদের হাতে তুলে দিতে হবে। লুমারিরা বলল, "আমরা তোমাদের মনকে আমাদের সাথে যুক্ত করব। তোমরা বেঁচে থাকবে, কিন্তু আমাদের একটি অংশ হয়ে।"
কেউ কেউ এটাকে মুক্তি বলল, কেউ বলল দাসত্ব। যারা রাজি হলো, তাদের চোখে আলো জ্বলে উঠল, আর তারা দেখতে পেল এক নতুন পৃথিবী—সবুজ মাঠ, নীল আকাশ, আর শান্তি। যারা অস্বীকার করল, তারা গম্বুজের নিচে রয়ে গেল, অক্সিজেনের জন্য হাঁপাতে হাঁপাতে।
শতাব্দী কেটে গেল। পৃথিবী আবার ফিরে এল তার পুরনো রূপে। কিন্তু মানুষ? তারা আর শুধু মানুষ ছিল না। লুমারিদের সাথে মিশে তারা হয়ে উঠল এক নতুন প্রজাতি—আলো আর ছায়ার মিশেল। কেউ কেউ ফিসফিস করে বলত, "আমরা কি সত্যিই বেঁচে আছি, নাকি এটা তাদের স্বপ্ন?"
একদিন, একটি ছোট মেয়ে, যার চোখে লুমারিদের আলো ছিল না, গম্বুজের ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি পুরনো ডায়েরি খুঁজে পেল। তাতে লেখা ছিল, "তারা আমাদের বাঁচিয়েছে, কিন্তু আমরা কি আর আমরা আছি?" মেয়েটি আকাশের দিকে তাকাল। সেখানে লুমারিদের আলোর জাহাজ ভাসছিল, আর তার মনে একটি প্রশ্ন জাগল—এই নতুন পৃথিবী কার?
আপনি গল্পটির পরের পর্ব চেয়েছেন, তাই আমি "আলোর ছায়া" গল্পটির ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দ্বিতীয় পর্ব লিখছি।
---
**শিরোনাম: ছায়ার প্রতিধ্বনি**
ছোট মেয়েটির নাম ছিল নীলা। তার চোখে লুমারিদের আলো না থাকলেও, তার মন ছিল তীক্ষ্ণ। পুরনো ডায়েরিটা হাতে নিয়ে সে বুঝতে পারল, এই নতুন পৃথিবীতে সবাই যেন একটা অদৃশ্য জালে বাঁধা। লুমারিদের সাথে যুক্ত মানুষেরা হাসছে, কাজ করছে, বেঁচে আছে—কিন্তু তাদের চোখে একটা শূন্যতা। নীলা লক্ষ্য করল, তারা কখনো প্রশ্ন করে না, কখনো সন্দেহ করে না।
এক রাতে, যখন আকাশে লুমারিদের জাহাজগুলো ঝিকঝিক করছিল, নীলা গম্বুজের ধ্বংসস্তূপের কাছে ফিরে গেল। সেখানে সে আরেকটি জিনিস খুঁজে পেল—একটি ছোট ধাতব যন্ত্র, যার ওপর অদ্ভুত লিপি খোদাই করা। সে যন্ত্রটি স্পর্শ করতেই একটা গভীর কম্পন শুরু হলো। হঠাৎ তার মাথায় একটি কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, "আমরা এখনো আছি। আমরা লড়ছি।"
নীলা চারপাশে তাকাল, কিন্তু কেউ ছিল না। কণ্ঠটা যেন যন্ত্রটির ভেতর থেকে আসছিল। সে বুঝল, এটা লুমারিদের নয়—এটা মানুষের তৈরি। তার হৃৎপিণ্ড দ্রুত লাফাতে শুরু করল। ডায়েরি আর যন্ত্রটি নিয়ে সে লুকিয়ে পড়ল একটি পরিত্যক্ত গুহায়। সেখানে সে যন্ত্রটির বোতাম টিপে ধরল।
একটি হলোগ্রাম জ্বলে উঠল। এটি একজন বৃদ্ধের ছবি, যার চোখে ভয় আর আশা মিশে ছিল। সে বলল, "আমি ড. রাহুল সেন। যদি তুমি এই বার্তা দেখছ, তাহলে আমাদের আশা এখনো বেঁচে আছে। লুমারিরা আমাদের বাঁচিয়েছে, কিন্তু তারা আমাদের মনকে দখল করে নিয়েছে। এই যন্ত্রটি তাদের সংযোগ ভাঙতে পারে। কিন্তু সাবধান, তারা জানতে পারলে সব শেষ।"
হলোগ্রাম বন্ধ হয়ে গেল। নীলার মাথা ঘুরছিল। সে বুঝল, এই যন্ত্রটি একটি অস্ত্র—মানুষের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার চাবিকাঠি। কিন্তু কীভাবে? সে একা, আর লুমারিরা সর্বত্র। তবু, তার ভেতরে একটা আগুন জ্বলে উঠল।
পরদিন সকালে, নীলা গুহা থেকে বেরিয়ে দেখল, একটি লুমারি জাহাজ তার গ্রামের ওপরে স্থির হয়ে আছে। গ্রামের লোকজন একসাথে দাঁড়িয়ে, তাদের চোখে আলো ঝিকঝিক করছে। হঠাৎ একটি লুমারি তার সামনে এসে দাঁড়াল। তার আলোর শরীর থেকে একটি শান্ত কণ্ঠ ভেসে এলো, "তুমি কিছু লুকোচ্ছ, নীলা। আমাদের দেখাও।"
নীলার হাতে যন্ত্রটি শক্ত করে ধরা। সে জানে, এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে—লড়বে, না হার মানবে। তার চোখে ভয় ছিল না, ছিল এক অদ্ভুত জেদ। সে ফিসফিস করে বলল, "তোমরা আমাদের বাঁচিয়েছ, কিন্তু আমি আমার মন ফিরিয়ে নেব।"
লুমারিটি নিস্তব্ধ হয়ে গেল। আকাশে জাহাজগুলোর আলো তীব্র হয়ে উঠল। নীলা যন্ত্রটির বোতাম টিপে ধরল। একটা তীক্ষ্ণ শব্দ ছড়িয়ে পড়ল, আর গ্রামের মানুষের চোখের আলো ম্লান হতে শুরু করল। কিন্তু সাথে সাথে লুমারি জাহাজ থেকে একটি শক্তিশালী রশ্মি নীলার দিকে ছুটে এলো।
সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেল।
---
আপনি জানতে চেয়েছেন পরের পর্বে কী হবে, তাই আমি "আলোর ছায়া" গল্পের তৃতীয় পর্বের একটি ধারাবাহিকতা লিখছি।
---
**শিরোনাম: জাগরণের সূচনা**
অন্ধকারের মধ্যে নীলা একটা শীতল স্পর্শ অনুভব করল। তার চোখ খুলতেই দেখল, সে একটা অদ্ভুত জায়গায়—চারপাশে আলোর সুতো দিয়ে বোনা দেয়াল, আর মাটিতে কোনো শব্দ নেই। তার হাতে যন্ত্রটা ছিল না। সে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে বুঝল, তার শরীর যেন হালকা, প্রায় ভেসে উঠছে। এটা লুমারিদের জাহাজের ভেতর।
একটি লুমারি তার সামনে এলো। এবার তার আলো তীব্র, প্রায় রাগে জ্বলছে। "তুমি আমাদের সংযোগ ভাঙার চেষ্টা করেছ," কণ্ঠটা নীলার মনে গেঁথে গেল। "কিন্তু তুমি বুঝলে না, আমরা তোমাদের বাঁচিয়েছি। এই বিশৃঙ্খল মন নিয়ে তোমরা আবার ধ্বংস ডেকে আনবে।"
নীলা জবাব দিল, "তোমরা আমাদের বাঁচিয়েছ, কিন্তু আমাদের আমি-টাকে মেরে ফেলেছ। আমরা কি শুধু তোমাদের ছায়া হয়ে থাকব?" লুমারিটি নীরব হয়ে গেল। তারপর বলল, "তোমাকে শেষ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। আমাদের সাথে যোগ দাও, নইলে তুমি আর তোমার মতো যারা আছে, সবাই মুছে যাবে।"
নীলা হাসল। "তোমরা আমার মন মুছতে পারো, কিন্তু আমার ইচ্ছাকে পারবে না।" সে জানত না কোথা থেকে এত সাহস আসছে, কিন্তু তার ভেতরে একটা শক্তি জেগে উঠছিল।
হঠাৎ জাহাজের ভেতর একটা কম্পন শুরু হলো। লুমারিটি তাকাল দূরে, যেন কিছু অনুভব করল। নীলা শুনতে পেল দূর থেকে একটা গুঞ্জন—মানুষের কণ্ঠস্বর, চিৎকার, আর পায়ের শব্দ। তার যন্ত্রটা কাজ করেছে। গ্রামের মানুষের চোখের আলো ম্লান হয়ে গেছে, আর তারা জেগে উঠছে—লুমারিদের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হয়ে।
জাহাজের বাইরে, পৃথিবীর সবুজ মাটিতে, একটি বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। যারা গম্বুজে বেঁচে ছিল, তারা বেরিয়ে এসেছে। তাদের হাতে পুরনো অস্ত্র, আর চোখে জ্বলছে স্বাধীনতার আগুন। নীলার যন্ত্রটি লুমারিদের সংযোগ ভেঙে দিয়েছে, কিন্তু পুরোপুরি নয়—কিছু মানুষ এখনো তাদের নিয়ন্ত্রণে।
জাহাজের ভেতর থেকে নীলা দেখল, একটি আলোর রশ্মি তার দিকে আসছে। কিন্তু ঠিক তখনই দেয়ালে একটা ফাটল ধরল। একটি মানুষ, ধূসর কাপড়ে মোড়া, হাতে একটা অদ্ভুত যন্ত্র নিয়ে ভেতরে ঢুকল। সে চিৎকার করে বলল, "নীলা, আমার সাথে আয়! আমরা এখনো হারিনি।" তার চোখে লুমারিদের আলো ছিল না।
নীলা দৌড়ে গেল। লুমারিটি তাকে আটকাতে গেল, কিন্তু সেই মানুষটি তার যন্ত্র থেকে একটা শক্তিশালী ঢেউ ছাড়ল, যা লুমারিটিকে পিছনে ঠেলে দিল। তারা জাহাজ থেকে বেরিয়ে পড়ল একটা ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্রামে। চারপাশে আগুন আর ধোঁয়া, কিন্তু মানুষের চিৎকারে ভরা।
মানুষটি বলল, "আমি আরিফ। আমরা একটা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছি। তোমার যন্ত্রটা আমাদের আশা জাগিয়েছে। কিন্তু লুমারিরা ফিরে আসবে, আরও শক্তি নিয়ে।" নীলা তাকাল আকাশে—জাহাজগুলো আবার জড়ো হচ্ছে।
সে বলল, "তাহলে আমাদের লড়তে হবে। আমরা আমাদের পৃথিবী ফিরিয়ে নেব।" তার কণ্ঠে দৃঢ়তা ছিল। আরিফ হাসল। "তোমার মতো আরও নীলা থাকলে আমরা জিতবই।"
দূরে, লুমারিদের আলো তীব্র হয়ে উঠল। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।
.jpg)
Comments
Post a Comment