**এলিয়েনের আগমন: তারার ডাক**
মঙ্গল গ্রহের আকাশে সেই উজ্জ্বল আলো দেখা যাওয়ার পর থেকে আরিয়ার মনে একটি নতুন উত্তেজনা জাগল। এটি কি জেরানদের ফিরে আসা, নাকি অন্য কোনো অজানা শক্তি? তিনি জানতেন, এই ঘটনা পৃথিবী ও মানবজাতির জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। তবে এবার তিনি একা ছিলেন না। তাঁর পাশে ছিল তাঁর ছাত্রী তানিয়া, একজন তরুণী যিনি জেরানদের গল্পে বড় হয়েছেন এবং মহাকাশের রহস্যের প্রতি তাঁর কৌতূহল ছিল অপরিসীম।
### নতুন সংকেত
মঙ্গল গ্রহের গবেষণা কেন্দ্রে আরিয়া ও তানিয়া সেই আলোর উৎস খুঁজতে শুরু করলেন। স্ক্রিনে তারা দেখলেন, আলোটি কোনো মহাকাশযান থেকে আসছে না, বরং এটি একটি বিশাল, স্থির কাঠামো থেকে নির্গত হচ্ছে। এটি ছিল একটি বিশাল রিং-আকৃতির বস্তু, যা মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে ঘুরছিল। এটি দেখতে একটি প্রাচীন মহাজাগতিক দুর্গের মতো, কিন্তু এর পৃষ্ঠে অদ্ভুত প্রতীক খোদাই করা ছিল।
তানিয়া বলল, “ডক্টর আরিয়া, এটা জেরানদের কাজ নয়। এই প্রতীকগুলো একদম ভিন্ন। আমরা কি এটার কাছে যাব?”
আরিয়া একটু দ্বিধায় পড়লেন। জেরানদের সঙ্গে তাঁদের অভিজ্ঞতা শান্তিপূর্ণ ছিল, কিন্তু এই নতুন সভ্যতা সম্পর্কে কিছুই জানা নেই। তবুও, তিনি জানতেন যে এই সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। তিনি বললেন, “আমরা একটি প্রোব পাঠাব। তারপর সিদ্ধান্ত নেব।”
প্রোবটি রিং-আকৃতির কাঠামোর কাছে পৌঁছতেই এটি একটি শক্তিশালী শক্তিক্ষেত্রে আটকা পড়ল। তবে ধ্বংস হওয়ার বদলে, প্রোবটি একটি সংকেত পাঠাল—একটি ভিডিও ফিড। স্ক্রিনে ফুটে উঠল একটি অদ্ভুত দৃশ্য: রিংটির ভেতরে ছিল একটি পোর্টালের মতো কাঠামো, যার মাঝখানে তারার একটি ঘূর্ণায়মান মণ্ডলী দৃশ্যমান। এটি দেখে মনে হচ্ছিল যেন এটি অন্য কোনো ছায়াপথ বা মাত্রার দ্বার।
তানিয়া উত্তেজিত হয়ে বলল, “এটা কি একটা ওয়ার্মহোল? আমরা কি এর মধ্যে দিয়ে অন্য কোথাও যেতে পারি?”
আরিয়া বললেন, “সম্ভব। কিন্তু আমরা জানি না এটা কারা তৈরি করেছে। এটা বিপদজনক হতে পারে।”
---
### অজানা সভ্যতার সন্ধান
তারা পৃথিবীতে খবর পাঠাল। WUO এই নতুন আবিষ্কার নিয়ে উত্তেজিত হল, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে মতবিরোধ শুরু হয়ে গেল। কেউ বলল, এই পোর্টালের মাধ্যমে মানুষ অন্য গ্রহে উপনিবেশ স্থাপন করতে পারে। কেউ বলল, এটি একটি ফাঁদ হতে পারে। এদিকে, আরিয়া ও তানিয়া সিদ্ধান্ত নিলেন যে তারা নিজেরাই এই রিংটির কাছে যাবেন।
তারা একটি উন্নত মহাকাশযানে চড়ে রিংটির কাছে পৌঁছলেন। কাছে গিয়ে তারা দেখলেন, রিংটির পৃষ্ঠে খোদাই করা প্রতীকগুলো আলোর সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে, যেন এটি জীবন্ত। হঠাৎ তাদের যানের স্ক্রিনে একটি হলোগ্রাম ফুটে উঠল। এবার এটি কোনো জেরান নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রাণী। এটির শরীর ছিল আলোর মতো, যেন এটি শক্তির একটি সত্তা। এর কণ্ঠ ছিল গভীর, কিন্তু শান্ত।
“আমরা এলারিয়ান। আমরা এই পোর্টালের স্রষ্টা। তোমরা এখানে এসেছ কারণ তোমরা জ্ঞানের সন্ধানী। কিন্তু এই পথে যাওয়ার জন্য তোমাদের প্রস্তুত হতে হবে।”
আরিয়া জিজ্ঞেস করলেন, “এই পোর্টাল কোথায় নিয়ে যায়? আপনারা আমাদের কী চান?”
এলারিয়ান বলল, “এই পোর্টালটি আমাদের ছায়াপথের কেন্দ্রে একটি জ্ঞানের ভাণ্ডারে নিয়ে যায়। সেখানে সকল সভ্যতার ইতিহাস, প্রযুক্তি, এবং রহস্য সংরক্ষিত আছে। কিন্তু শুধু যারা তাদের অহংকার ত্যাগ করতে পারে, তারাই এই পথে যেতে পারে। তোমরা কি প্রস্তুত?”
তানিয়া বলল, “আমরা কীভাবে প্রমাণ করব যে আমরা প্রস্তুত?”
এলারিয়ান বলল, “তোমাদের গ্রহে ফিরে যাও। তোমাদের জনগণকে এই পোর্টালের কথা বলো। যদি তারা একত্রিত হয়ে এই জ্ঞানের পথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে আমরা তোমাদের পথ দেখাব। কিন্তু যদি তারা আবারও বিভেদের পথ বেছে নেয়, তবে এই পোর্টাল চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।”
---
### পৃথিবীর নতুন চ্যালেঞ্জ
আরিয়া ও তানিয়া পৃথিবীতে ফিরে এলেন। এবার তাদের কাজ ছিল আরও কঠিন। জেরানদের ডিভাইস মানুষকে একত্রিত করেছিল, কিন্তু এলারিয়ানদের প্রস্তাব ছিল ভিন্ন। এটি শুধু পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য নয়, বরং মানবজাতিকে ছায়াপথের একটি অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। তারা আবারও বিশ্বব্যাপী সম্প্রচারের আয়োজন করল।
আরিয়া বললেন, “এই পোর্টাল আমাদের জন্য একটি নতুন দরজা খুলতে পারে। কিন্তু এটি শুধু তখনই সম্ভব যদি আমরা আমাদের পুরোনো ভুলগুলো পেছনে ফেলে এগিয়ে যাই। আমরা কি প্রস্তুত এই দায়িত্ব নিতে?”
তানিয়া যোগ করল, “আমরা যুবারা এই ভবিষ্যৎ চাই। আমরা চাই আমাদের সন্তানরা তারাদের মধ্যে বেড়ে উঠুক। কিন্তু এটা আমরা একা করতে পারব না। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”
কিন্তু এবারও প্রতিরোধ এল। কিছু শক্তিশালী গোষ্ঠী বলল, এই পোর্টালের মাধ্যমে তারা নতুন সম্পদ ও ক্ষমতা চায়। অন্যরা ভয় পেল যে এটি মানুষের পরিচয় হারিয়ে ফেলার কারণ হতে পারে। এমনকি কিছু ধর্মীয় গোষ্ঠী বলল, এটি মানুষের জন্য নিষিদ্ধ পথ।
তবে এবার তানিয়ার প্রজন্ম পিছপা হল না। তারা “স্টার কলিং” নামে একটি নতুন আন্দোলন শুরু করল। তারা প্রতিটি ভাসমান শহরে গিয়ে মানুষকে বোঝাল, এই পোর্টাল শুধু জ্ঞানের জন্য নয়, এটি মানুষের বেঁচে থাকার জন্য একটি নতুন সম্ভাবনা। ধীরে ধীরে, তাদের প্রচেষ্টা ফল দিল। বিশ্বের বেশিরভাগ শহর এলারিয়ানদের প্রস্তাব গ্রহণ করতে রাজি হল।
---
### পোর্টালের পথে
একটি নির্দিষ্ট দিনে, পৃথিবী ও মঙ্গল গ্রহ থেকে একটি মিশন প্রস্তুত করা হল। আরিয়া, তানিয়া, এবং একদল বিজ্ঞানী ও মহাকাশচারী রিংটির কাছে ফিরে গেলেন। এলারিয়ানরা তাদের স্বাগত জানাল। পোর্টালটি সক্রিয় হল, এবং তারা একটি অবিশ্বাস্য দৃশ্য দেখল। তারার ঘূর্ণায়মান মণ্ডলীর মধ্যে দিয়ে তারা একটি নতুন ছায়াপথে প্রবেশ করল। সেখানে ছিল অগণিত গ্রহ, বিভিন্ন সভ্যতার স্মৃতিস্তম্ভ, এবং জ্ঞানের একটি বিশাল ভাণ্ডার।
এলারিয়ানরা বলল, “এখানে তোমরা শিখবে কীভাবে তোমাদের গ্রহকে আরও উন্নত করতে হয়। কিন্তু এই জ্ঞান তোমাদের দায়িত্বও বাড়িয়ে দেবে। তোমরা এখন ছায়াপথের একটি অংশ।”
আরিয়া তাকিয়ে দেখলেন তানিয়ার চোখে একটি নতুন আলো। তিনি বুঝলেন, এই তরুণ প্রজন্মই এই জ্ঞানকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি বললেন, “আমরা প্রস্তুত। আমরা এই পথে হাঁটব।”
---
### নতুন দিগন্ত
পৃথিবীতে ফিরে এসে তারা এলারিয়ানদের জ্ঞান ব্যবহার করে নতুন প্রযুক্তি তৈরি করল। এই প্রযুক্তি মানুষকে শুধু পৃথিবীতে নয়, অন্য গ্রহেও বসবাসের সুযোগ করে দিল। মানুষ ধীরে ধীরে ছায়াপথের অন্য সভ্যতার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করল। তবে তারা জেরানদের শিক্ষা ভোলেনি—ঐক্য ছাড়া কোনো সভ্যতা টিকে থাকতে পারে না।
কিন্তু ছায়াপথে শান্তি সবসময় থাকে না। একদিন, আরিয়া ও তানিয়া একটি নতুন সংকেত পেলেন। এবার এটি কোনো বন্ধুত্বপূর্ণ সভ্যতার নয়, বরং একটি আগ্রাসী শক্তির। তারা জানতেন, মানুষের জন্য এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ বাকি। কিন্তু এবার তারা একা ছিল না—তাদের পাশে ছিল জেরান, এলারিয়ান, এবং তাদের নিজেদের ঐক্য।
**সমাপ্ত (আপাতত)**
.jpg)
Comments
Post a Comment