**এলিয়েনের আগমন: নতুন পথের সন্ধান**
আরিয়া, জ্যাক এবং সোফিয়া পৃথিবীতে ফিরে এলেন জেরানদের বার্তা নিয়ে। তাদের হাতে ছিল একটি অভূতপূর্ব সুযোগ: জেরানদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা। কিন্তু এই বার্তা বিশ্বের কাছে পৌঁছানো এবং মানুষকে একত্রিত করা ছিল একটি প্রায় অসম্ভব কাজ। পৃথিবী তখন ভাগ হয়ে গিয়েছিল—ভাসমান শহরগুলোর মধ্যে ধনী ও গরিবের মধ্যে বিস্তর বৈষম্য, দেশগুলোর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই, এবং বিজ্ঞানীদের সঙ্গে রাজনীতিবিদদের মতবিরোধ। তবুও, আরিয়ার মনে একটি জেদ ছিল: তিনি পৃথিবীকে বাঁচাতে চান।
### পৃথিবীতে ফিরে আসা
পৃথিবীতে ফিরে এসে তারা প্রথমে বিশ্ব ঐক্য সংস্থার (World Unity Organization, WUO) সঙ্গে যোগাযোগ করল। এই সংস্থাটি ছিল পৃথিবীর শেষ আশা, যারা বিশ্বের বিভিন্ন ভাসমান শহরের মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করত। আরিয়া একটি জরুরি সভায় জেরানদের হলোগ্রাম বার্তা প্রদর্শন করলেন। হলোগ্রামে জেরানদের প্রতিনিধি আবারও বলল, “তোমাদের গ্রহ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা তোমাদের প্রযুক্তি দিতে পারি, কিন্তু শুধু যদি তোমরা একত্রিত হও। বিভেদ আর ধ্বংসের পথ ত্যাগ করো।”
কিন্তু সভায় উপস্থিত নেতারা একমত হতে পারলেন না। কেউ কেউ জেরানদের প্রযুক্তির উপর নিয়ন্ত্রণ চাইলেন, কেউ বললেন এটা একটা ফাঁদ। উত্তর আমেরিকার ভাসমান শহরগুলোর প্রতিনিধি, কমান্ডার হার্ডিং, বললেন, “আমরা কেন এই এলিয়েনদের উপর ভরসা করব? তারা হয়তো আমাদের দখল করতে চায়!” অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিনিধি রাজা সেন বললেন, “আমাদের আর সময় নেই। আমাদের শহরগুলো প্রতিদিন ডুবে যাচ্ছে। আমাদের এই সুযোগ নিতেই হবে।”
আরিয়া বুঝলেন, শুধু বার্তা দিয়ে মানুষকে বোঝানো যাবে না। তাদের কিছু দেখাতে হবে। তিনি জেরানদের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
---
### জেরানদের সঙ্গে দ্বিতীয় সাক্ষাৎ
আরিয়া এবং তাঁর দল একটি ছোট মহাকাশযানে করে কুইপার বেল্টের দিকে রওনা দিলেন। তাদের সঙ্গে ছিল একটি নতুন বার্তা: “আমরা চাই আপনারা আমাদের বিশ্বাস অর্জন করুন। আমাদের এমন কিছু দেখান যা মানুষকে একত্রিত করবে।”
জেরানদের মহাকাশযানে পৌঁছে তারা একটি অবিশ্বাস্য দৃশ্য দেখল। যানটির ভেতরে ছিল একটি বিশাল গোলাকার হল, যেখানে দেয়ালগুলো যেন তরল আলো দিয়ে তৈরি। জেরানদের প্রতিনিধি, যার নাম ছিল জে’রা, তাদের স্বাগত জানাল। জে’রা বলল, “আমরা তোমাদের গ্রহের ইতিহাস দেখেছি। তোমরা অনেক ভুল করেছ, কিন্তু তোমাদের মধ্যে সম্ভাবনা আছে। আমরা তোমাদের একটি ডিভাইস দেব, যা তোমাদের সমুদ্রের পানি বিশুদ্ধ করতে পারে এবং জলবায়ুকে স্থিতিশীল করতে পারে। কিন্তু এটি শুধু তখনই কাজ করবে যদি তোমরা সবাই মিলে এটি ব্যবহার করো।”
জে’রা তাদের একটি ছোট, স্ফটিকের মতো ডিভাইস দিল। এটি ছিল একটি কোয়ান্টাম-ভিত্তিক জলবায়ু নিয়ন্ত্রক, যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে পুনরুদ্ধার করতে পারত। কিন্তু এটির শক্তি সক্রিয় করতে প্রয়োজন ছিল বিশ্বের সব ভাসমান শহর থেকে একযোগে শক্তি সরবরাহ। এটি ছিল জেরানদের একটি পরীক্ষা—মানুষ কি সত্যিই একত্রিত হতে পারবে?
---
### পৃথিবীর সিদ্ধান্ত
আরিয়ারা পৃথিবীতে ফিরে এসে ডিভাইসটি WUO-এর কাছে উপস্থাপন করল। এবার তারা একটি বিশ্বব্যাপী সম্প্রচারের আয়োজন করল, যাতে প্রতিটি ভাসমান শহরের মানুষ জেরানদের বার্তা এবং ডিভাইসটির সম্ভাবনা দেখতে পায়। আরিয়া বললেন, “এটি আমাদের শেষ সুযোগ। আমরা যদি এখন একত্রিত না হই, তাহলে আমাদের পৃথিবী হারিয়ে যাবে। এই ডিভাইসটি আমাদের বাঁচাতে পারে, কিন্তু এটি কাজ করবে শুধু যদি আমরা সবাই মিলে কাজ করি।”
কিন্তু সবাই একমত হল না। কিছু শহর বলল, তারা ডিভাইসটির উপর একক নিয়ন্ত্রণ চায়। অন্যরা ভয় পেল যে এটি একটি এলিয়েন অস্ত্র হতে পারে। এমনকি কিছু গোষ্ঠী ডিভাইসটি ধ্বংস করার পরিকল্পনা করল। সময় ফুরিয়ে আসছিল। পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠ আরও বাড়ছিল, এবং ভাসমান শহরগুলোর অনেকগুলো ডুবে যাওয়ার পথে।
এই সংকটের মধ্যে একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটল। পৃথিবীর যুব সমাজ, যারা তাদের ভবিষ্যৎ হারানোর ভয়ে ক্লান্ত ছিল, একটি বিশ্বব্যাপী আন্দোলন শুরু করল। তারা সোশ্যাল নেটওয়ার্কে “ইউনিটি ফর আর্থ” নামে একটি প্রচারণা চালাল। লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে এল, তাদের শহরের নেতাদের উপর চাপ সৃষ্টি করল যেন তারা জেরানদের ডিভাইসটি ব্যবহারে রাজি হয়।
অবশেষে, একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তে, বিশ্বের ৯০% ভাসমান শহর জেরানদের ডিভাইস সক্রিয় করতে সম্মত হল। একটি নির্দিষ্ট দিনে, প্রতিটি শহর থেকে শক্তি সরবরাহ করা হল। আরিয়া, জ্যাক, এবং সোফিয়া মঙ্গল গ্রহের গবেষণা কেন্দ্র থেকে এই ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছিলেন। যখন ডিভাইসটি সক্রিয় হল, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে একটি নীল আলোর তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ল। মেঘগুলো সরে গেল, সমুদ্রের পানি বিশুদ্ধ হতে শুরু করল, এবং তাপমাত্রা ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হল।
---
### নতুন যুগের শুরু
জেরানদের ডিভাইস কাজ করছিল। কিন্তু এটি শুধু পৃথিবীকে বাঁচায়নি, এটি মানুষের মধ্যে একটি নতুন ঐক্যের জন্ম দিয়েছিল। বিশ্বের নেতারা বুঝলেন যে বিভেদ আর যুদ্ধ তাদের কিছুই দেবে না। তারা একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করল, যার নাম দেওয়া হল “আর্থ ইউনিটি অ্যাকর্ড”। এই চুক্তির মাধ্যমে মানুষ প্রতিশ্রুতি দিল যে তারা পৃথিবীকে আর কখনো ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে না।
জেরানরা তাদের কাজ শেষ করে কুইপার বেল্ট থেকে চলে গেল। তারা একটি শেষ বার্তা রেখে গেল: “তোমরা এখন নিজেদের ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক। আমরা আবার ফিরে আসব, যখন তোমরা আমাদের সঙ্গে ছায়াপথে যোগ দিতে প্রস্তুত হবে।”
আরিয়া মঙ্গল গ্রহের গবেষণা কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে তারার দিকে তাকিয়ে ভাবলেন, “আমরা এখনো অনেক দূর যেতে পারিনি। কিন্তু আমরা শুরু করেছি।” তাঁর পাশে জ্যাক হাসলেন। “তুমি ঠিক বলেছ, আরিয়া। এটা শুধু শুরু।”
---
### ভবিষ্যতের পথ
পৃথিবী ধীরে ধীরে তার হারানো সৌন্দর্য ফিরে পেতে শুরু করল। ভাসমান শহরগুলোর পরিবর্তে মানুষ আবার নতুন জমিতে বসতি স্থাপন করল। জেরানদের প্রযুক্তি মানুষকে শুধু জলবায়ু নিয়ন্ত্রণই শেখায়নি, এটি তাদের শক্তি উৎপাদনের নতুন পদ্ধতি এবং মহাকাশ ভ্রমণের সম্ভাবনা দেখিয়েছিল।
কিন্তু আরিয়া জানতেন, এই শান্তি স্থায়ী হবে কিনা তা নির্ভর করছে মানুষের উপর। তিনি একটি নতুন প্রজন্মকে শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব নিলেন, যারা জেরানদের বার্তা মনে রাখবে। তিনি প্রতিদিন তারার দিকে তাকিয়ে ভাবতেন, “তারা কি আমাদের দেখছে? আমরা কি তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারব?”
একদিন, মঙ্গল গ্রহের আকাশে আরেকটি উজ্জ্বল আলো দেখা গেল। এটি কি জেরানদের ফিরে আসা, নাকি অন্য কোনো অজানা সভ্যতার সংকেত? আরিয়া হাসলেন। তিনি জানতেন, এই গল্পের শেষ এখনো হয়নি।
**চলবে**
৩য় পর্ব : এলিয়েনের আগমন: তারার ডাক.jpg)
Comments
Post a Comment